আনন্দ এবং বিস্ময়

সপ্তার প্রথম দিনের খুব সকালবেলা সেই স্ত্রীলোকেরা সেই খোশবু মসলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। তাঁরা দেখলেন কবরের মুখ থেকে পাথরখানা সরিয়ে রাখা হয়েছে, কিন্তু কবরের ভিতরে গিয়ে তাঁরা হযরত ঈসার লাশ দেখতে পেলেন না। 

যখন তাঁরা অবাক হয়ে সেই বিষয়ে ভাবছিলেন তখন বিদ্যুতের মত ঝক্‌ঝকে কাপড় পরা দু’জন লোক তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। এতে স্ত্রীলোকেরা ভয় পেয়ে মাথা নীচু করলেন। লোক দু’টি তাঁদের বললেন, “যিনি জীবিত তাঁকে মৃতদের মধ্যে তালাশ করছ কেন? তিনি এখানে নেই; তিনি জীবিত হয়ে উঠেছেন। তিনি যখন গালীলে ছিলেন তখন তিনি তোমাদের কাছে যা বলেছিলেন তা মনে করে দেখ। তিনি বলেছিলেন, ইব্‌ন্তেআদমকে গুনাহ্‌গার লোকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। তার পরে তাঁকে ক্রুশের উপরে হত্যা করা হবে এবং তৃতীয় দিনে তাঁকে আবার জীবিত হয়ে উঠতে হবে।”

তখন তাঁদের সেই কথা মনে পড়ল। তাঁরা কবর থেকে ফিরে গিয়ে সেই এগারোজন সাহাবী এবং অন্য সকলকে এই সব কথা জানালেন। সেই স্ত্রীলোকদের মধ্যে ছিলেন মগ্‌দলীনী মরিয়ম, যোহানা ও ইয়াকুবের মা মরিয়ম। তাঁদের সংগে আর অন্য যে স্ত্রীলোকেরা ছিলেন তাঁরাও এই সমস্ত কথা সাহাবীদের কাছে বললেন। কিন্তু সেই সব কথা তাঁদের কাছে বাজে কথার মতই মনে হল। সেইজন্য সেই স্ত্রীলোকদের কথা তাঁরা বিশ্বাস করলেন না। পিতর কিন্তু উঠে দৌড়ে কবরের কাছে গেলেন এবং নীচু হয়ে কেবল কাপড়গুলোই দেখতে পেলেন। যা ঘটেছে তাতে আশ্চর্য হয়ে তিনি ফিরে আসলেন।

সেই দিনেই দু’জন সাহাবী ইম্মায়ূ নামে একটা গ্রামে যাচ্ছিলেন। গ্রামটা জেরুজালেম থেকে প্রায় সাত মাইল দূরে ছিল। যা ঘটেছে তা নিয়ে তাঁরা আলাপ-আলোচনা করছিলেন। সেই সময় ঈসা নিজেই সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের সংগে হাঁটতে শুরু করলেন। তাঁদের চোখ যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাই তাঁরা ঈসাকে চিনতে পারলেন না। 

তখন ঈসা তাঁদের বললেন, “আপনারা কি কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন?”

সেই দু’জন উম্মত ম্লান মুখে দাঁড়িয়ে রইলেন। তখন ক্লিয়পা নামে তাঁদের মধ্যে একজন ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনিই কি জেরুজালেমের একমাত্র লোক যিনি জানেন না এই কয়দিনে সেখানে কি কি ঘটছে?”

ঈসা তাঁদের বললেন, “কি কি ঘটেছে?”

তাঁরা বললেন, “নাসরত গ্রামের ঈসাকে নিয়ে যা যা ঘটেছে। তিনি নবী ছিলেন। তিনি কাজে ও কথায় আল্লাহ্‌ ও সমস্ত লোকের চোখে শক্তিশালী ছিলেন। আমাদের প্রধান ইমামেরা ও ধর্ম-নেতারা তাঁকে রোমীয়দের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন যাতে তারা তাঁর বিচার করে তাঁকে মৃত্যুর শাস্তি দেয়। পরে সেই ইহুদী নেতারা তাঁকে ক্রুশে দিয়েছিলেন। আমরা আশা করেছিলাম তিনিই ইসরাইল জাতিকে মুক্ত করবেন। কেবল তা-ই নয়, আজ তিন দিন হল এই সব ঘটনা ঘটেছে। আবার আমাদের দলের কয়েকজন স্ত্রীলোক আমাদের অবাক করেছেন। তাঁরা খুব সকালে ঈসার কবরে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তাঁর লাশ দেখতে পান নি। তাঁরা ফিরে এসে বললেন, তাঁরা ফেরেশতাদের দেখা পেয়েছেন আর সেই ফেরেশতারা তাঁদের বলেছেন যে, ঈসা বেঁচে আছেন। তখন আমাদের সংগে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন কবরে গিয়ে স্ত্রীলোকেরা যেমন বলেছিলেন ঠিক তেমনি দেখতে পেলেন, কিন্তু ঈসাকে দেখতে পেলেন না।”

তখন ঈসা তাঁদের বললেন, “আপনারা কিছুই বোঝেন না। আপনাদের মন এমন অসাড় যে, নবীরা যা বলেছেন তা আপনারা বিশ্বাস করেন না। এই সমস্ত কষ্ট ভোগ করে কি মসীহের মহিমা লাভ করবার কথা ছিল না?” এর পরে তিনি মূসার এবং সমস্ত নবীদের কিতাব থেকে শুরু করে গোটা পাক-কিতাবের মধ্যে তাঁর নিজের বিষয়ে যা যা লেখা আছে তা সবই তাঁদের বুঝিয়ে বললেন।

তাঁরা যে গ্রামে যাচ্ছিলেন সেই গ্রামের কাছাকাছি আসলে পর ঈসা আরও দূরে যাবার ভাব দেখালেন। তখন তাঁরা খুব সাধাসাধি করে তাঁকে বললেন, “এখন বেলা গেছে, সন্ধ্যা হয়েছে। আপনি আমাদের সংগে থাকুন।”

এতে তিনি তাঁদের সংগে থাকবার জন্য ঘরে ঢুকলেন। যখন তিনি তাঁদের সংগে খেতে বসলেন তখন রুটি নিয়ে আল্লাহ্‌কে শুকরিয়া জানালেন এবং তা টুকরা করে তাঁদের দিলেন। তখন তাঁদের চোখ খুলে গেল; তাঁরা ঈসাকে চিনতে পারলেন, কিন্তু তার সংগে সংগেই তাঁকে আর দেখা গেল না। তখন তাঁরা একে অন্যকে বললেন, “রাস্তায় যখন তিনি আমাদের সংগে কথা বলছিলেন এবং পাক-কিতাব বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তখন আমাদের অন্তর কি জ্বলে জ্বলে উঠছিল না?”

তখনই সেই দু’জন উঠে জেরুজালেমে গেলেন এবং সেই এগারোজন সাহাবী ও তাঁদের সংগে অন্যদেরও এক জায়গায় দেখতে পেলেন। হযরত ঈসা যে সত্যিই জীবিত হয়ে উঠেছেন এবং শিমোনকে দেখা দিয়েছেন তা নিয়ে তখন তাঁরা আলোচনা করছিলেন। সেই দু’জন সাহাবী রাস্তায় যা হয়েছিল তা তাঁদের জানালেন। তাঁরা আরও জানালেন, তিনি যখন রুটি টুকরা টুকরা করছিলেন তখন কেমন করে তাঁরা তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন।

সেই সাহাবীরা যখন এই কথা বলছিলেন তখন ঈসা নিজে তাঁদের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে তাঁদের সবাইকে বললেন, “আস্‌সালামু আলাইকুম।”

তাঁরা ভূত দেখছেন ভেবে খুব ভয় পেলেন। ঈসা তাঁদের বললেন, “কেন তোমরা অস্থির হচ্ছ আর কেনই বা তোমাদের মনে সন্দেহ জাগছে? আমার হাত ও পা দেখ। দেখ, এ আমি। আমাকে ছুঁয়ে দেখ, কারণ ভূতের তো আমার মত হাড়-মাংস নেই।”

এই কথা বলে ঈসা তাঁর হাত ও পা তাঁদের দেখালেন। কিন্তু তাঁরা এত আশ্চর্য ও আনন্দিত হয়েছিলেন যে, বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তখন ঈসা তাঁদের বললেন, “তোমাদের এখানে কি কোন খাবার আছে?”

তাঁরা তাঁকে এক টুকরা ভাজা মাছ দিলেন। তিনি তা নিয়ে তাঁদের সামনেই খেলেন। তারপর তিনি তাঁদের বললেন, “আমি যখন তোমাদের সংগে ছিলাম তখন বলেছিলাম, মূসার তৌরাত শরীফে, নবীদের কিতাবে ও জবুর শরীফের মধ্যে আমার বিষয়ে যে যে কথা লেখা আছে তার সব পূর্ণ হতেই হবে।”

পাক-কিতাব বুঝবার জন্য তিনি সাহাবীদের বুদ্ধি খুলে দিলেন এবং তাঁদের বললেন, “লেখা আছে, মসীহ্‌কে কষ্ট ভোগ করতে হবে এবং তিন দিনের দিন মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে। আরও লেখা আছে, জেরুজালেম থেকে শুরু করে সমস্ত জাতির কাছে মসীহের নামে এই খবর তবলিগ করা হবে যে, তওবা করলে গুনাহের মাফ পাওয়া যায়। তোমরাই এই সমস্ত বিষয়ের সাক্ষী। দেখ, আমার পিতা যা দেবার ওয়াদা করেছেন তা আমি তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। বেহেশত থেকে শক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তোমরা এই শহরেই থেকো।”

পরে ঈসা তাঁর সাহাবীদের নিয়ে বেথানিয়া পর্যন্ত গেলেন। সেখানে তিনি হাত তুলে তাঁদের দোয়া করলেন। দোয়া করতে করতেই তিনি তাঁদের ছেড়ে গেলেন এবং তাঁকে বেহেশতে তুলে নেওয়া হল। তখন তাঁরা উবুড় হয়ে তাঁকে সেজদা করলেন এবং খুব আনন্দের সংগে জেরুজালেমে ফিরে গেলেন। তাঁরা সব সময় বায়তুল-মোকাদ্দসে উপস্থিত থেকে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করতে লাগলেন।

লূক

Posted in জীবন, বই, বিশ্বাস, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

যীশুর মৃত্যু

সৈন্যেরা যখন ঈসাকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন শিমোন নামে কুরীণী শহরের একজন লোক গ্রামের দিক থেকে আসছিল। সৈন্যেরা তাকে জোর করে ধরে ক্রুশটা তার কাঁধে তুলে দিল যেন সে ঈসার পিছনে তা বয়ে নিয়ে যেতে পারে। অনেক লোক ঈসার পিছনে পিছনে যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে অনেক স্ত্রীলোকও ছিল। তারা বুক চাপ্‌ড়ে কাঁদছিল। 

ঈসা তাদের দিকে ফিরে বললেন, “জেরুজালেমের মেয়েরা, আমার জন্য কেঁদো না। তোমাদের নিজেদের জন্য এবং তোমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কাঁদ, কারণ এমন দিন আসছে যখন লোকে বলবে, ‘যাদের কখনও ছেলেমেয়ে হয় নি এবং যারা কখনও বুকের দুধ শিশুদের খাওয়ায় নি সেই বন্ধ্যা স্ত্রীলোকেরা ধন্যা।’ সেই সময়ে লোকে বড় বড় পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের উপর পড়,’ আর ছোট ছোট পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের ঢেকে রাখ।’ গাছ সবুজ থাকতে যদি লোকে এই রকম করে তবে গাছ শুকনা হলে পর কিনা হবে!”

সৈন্যেরা দু’জন দোষী লোককেও হত্যা করবার জন্য ঈসার সংগে নিয়ে চলল। যে জায়গাটাকে মাথার খুলি বলা হত সেখানে পৌঁছে তারা ঈসাকে ও সেই দু’জন দোষীকে ক্রুশে দিল- একজনকে ঈসার ডান দিকে ও অন্যজনকে বাঁদিকে। তখন ঈসা বললেন, “পিতা, এদের মাফ কর, কারণ এরা কি করছে তা জানে না।”

তারা গুলিবাঁট করে ঈসার কাপড়-চোপড় নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। লোকেরা দাঁড়িয়ে দেখছিল। ধর্ম-নেতারা ঈসাকে ঠাট্টা করে বললেন, “সে তো অন্যদের রক্ষা করত। যদি সে আল্লাহ্‌র মসীহ্‌, তাঁর বাছাই-করা বান্দা হয় তবে নিজেকে রক্ষা করুক!”

সৈন্যেরাও তাঁকে ঠাট্টা করতে লাগল। তারা ঈসাকে খেতে দেবার জন্য তাঁর কাছে সিরকা নিয়ে গিয়ে বলল, “তুমি যদি ইহুদীদের বাদশাহ্‌ হও তবে নিজেকে রক্ষা কর।”

ক্রুশে তাঁর মাথার উপরের দিকে একটা ফলকে এই কথা লেখা ছিল, “এই লোকটি ইহুদীদের বাদশাহ্‌।”

যে দু’জন দোষী লোককে সেখানে ক্রুশে টাংগানো হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন ঈসাকে টিট্‌কারি দিয়ে বলল, “তুমি নাকি মসীহ্‌? তাহলে নিজেকে ও আমাদের রক্ষা কর।”

তখন অন্য লোকটি তাকে বকুনি দিয়ে বলল, “তুমি কি আল্লাহ্‌কে ভয় কর না? তুমি তো একই রকম শাস্তি পাচ্ছ। আমরা উচিত শাস্তি পাচ্ছি। আমাদের যা পাওনা আমরা তা-ই পাচ্ছি, কিন্তু এই লোকটি তো কোন দোষ করে নি।” 

তারপর সে বলল, “ঈসা, আপনি যখন রাজত্ব করতে ফিরে আসবেন তখন আমার কথা মনে করবেন।”

জবাবে ঈসা তাকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সংগে জান্নাতুল-ফেরদৌসে উপস্থিত হবে।”

তখন বেলা প্রায় দুপুর। সূর্য আলো দেওয়া বন্ধ করল এবং সারা দেশ অন্ধকার হয়ে গেল। বেলা তিনটা পর্যন্ত সেই রকমই রইল। বায়তুল-মোকাদ্দসের পর্দাটা মাঝখানে চিরে দু’ভাগ হয়ে গেল।

ঈসা চিৎকার করে বললেন, “পিতা, আমি তোমার হাতে আমার রূহ্‌ তুলে দিলাম।” এই কথা বলে তিনি প্রাণত্যাগ করলেন।

এই সব দেখে রোমীয় শত-সেনাপতি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করে বললেন, “সত্যিই লোকটি ধার্মিক ছিল।”

যে লোকেরা সেখানে জমায়েত হয়েছিল তারা এই সমস্ত ঘটনা দেখে বুক চাপ্‌ড়াতে চাপ্‌ড়াতে সেখান থেকে ফিরে গেল। যাঁরা ঈসাকে চিনতেন এবং যে স্ত্রীলোকেরা গালীল থেকে তাঁর সংগে সংগে এসেছিলেন তাঁরা সবাই দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন।

ইউসুফ নামে একজন সৎ ও ধার্মিক লোক মহাসভার সদস্য ছিলেন। তিনি অরিমাথিয়া নামে ইহুদীদের একটা গ্রামের লোক। ঈসার বিষয়ে সভার লোকদের সংগে তিনি একমত হতে পারেন নি। তিনি আল্লাহ্‌র রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পীলাতের কাছে গিয়ে তিনি ঈসার লাশটি চেয়ে নিলেন। পরে লাশটি ক্রুশ থেকে নামিয়ে কাফন দিয়ে জড়ালেন এবং পাথর কেটে তৈরী করা একটা কবরের মধ্যে দাফন করলেন। সেই কবরে আর কখনও কাউকে দাফন করা হয় নি।

সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবারের আয়োজনের দিন। বিশ্রামবার প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল। যে স্ত্রীলোকেরা ঈসার সংগে গালীল থেকে এসেছিলেন তাঁরা ইউসুফের পিছনে পিছনে গিয়ে কবরটি দেখলেন এবং ঈসার লাশ কিভাবে দাফন করা হল তাও দেখলেন। তারপর তাঁরা ফিরে গিয়ে তাঁর লাশের জন্য খোশবু মসলা এবং মলম তৈরী করলেন। এর পরে তাঁরা মূসার হুকুম মত বিশ্রামবারে বিশ্রাম করলেন।

লূক

Posted in জীবন, বই, বিশ্বাস, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

ভুল সিদ্ধান্ত

যারা ঈসাকে পাহারা দিচ্ছিল তারা তাঁকে ঠাট্টা করতে ও মারতে লাগল। তারা ঈসার চোখ বেঁধে দিয়ে বলল, “বল্‌ তো দেখি, কে তোকে মারল?” এইভাবে তারা আরও অনেক কথা বলে তাঁকে অপমান করল।

সকাল হলে পর ইহুদীদের বৃদ্ধনেতারা, প্রধান ইমামেরা এবং আলেমেরা একসংগে জমায়েত হলেন এবং ঈসাকে তাঁদের মহাসভার সামনে এনে বললেন, “তুমি যদি মসীহ্‌ হও তবে আমাদের বল।”

ঈসা বললেন, “আমি যদি বলি তবুও আপনারা কোনমতেই বিশ্বাস করবেন না এবং আপনাদের কিছু জিজ্ঞাসা করলে জবাব দেবেন না। কিন্তু ইব্‌ন্তেআদম এখন থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র ডানপাশে বসে থাকবেন।”

তখন সকলে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তুমি কি ইব্‌নুল্লাহ্‌?”

তিনি তাঁদের বললেন, “আপনারা ঠিকই বলছেন যে, আমিই সে-ই।”

তখন নেতারা বললেন, “আমাদের আর সাক্ষ্যের কি দরকার? আমরা নিজেরাই তো ওর মুখে শুনলাম।”

তখন সেই সভার সকলে উঠে ঈসাকে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। তাঁরা এই বলে ঈসার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে লাগলেন, “আমরা দেখেছি, এই লোকটা সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লোকদের নিয়ে যাচ্ছে। সে সম্রাটকে খাজনা দিতে নিষেধ করে এবং বলে সে নিজেই মসীহ্‌, একজন বাদশাহ্‌।”

পীলাত ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের বাদশাহ্‌?”

ঈসা বললেন, “আপনি ঠিক কথাই বলছেন।”

তখন পীলাত প্রধান ইমামদের ও সমস্ত লোকদের বললেন, “আমি তো এই লোকটির কোন দোষই দেখতে পাচ্ছি না।”

কিন্তু তাঁরা জিদ করে বলতে লাগলেন, “এহুদিয়া প্রদেশের সব জায়গায় শিক্ষা দিয়ে এ লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে। গালীল প্রদেশ থেকে সে শুরু করেছে, আর এখন এখানে এসেছে।”

এই কথা শুনে পীলাত জিজ্ঞাসা করলেন ঈসা গালীল প্রদেশের লোক কি না। শাসনকর্তা হেরোদের শাসনের অধীনে যে প্রদেশ আছে, ঈসা সেই জায়গার লোক জানতে পেরে পীলাত তাঁকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই সময় হেরোদও জেরুজালেমে ছিলেন। 

ঈসাকে দেখে হেরোদ খুব খুশী হলেন। তিনি ঈসার সম্বন্ধে অনেক কথা শুনেছিলেন, তাই তিনি অনেক দিন ধরে তাঁকে দেখতে চাইছিলেন। হেরোদ আশা করেছিলেন ঈসা তাঁকে কোন অলৌকিক কাজ করে দেখাবেন। তিনি ঈসাকে অনেক প্রশ্ন করলেন, কিন্তু ঈসা কোন কথারই জবাব দিলেন না। প্রধান ইমামেরা এবং আলেমেরা সেখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ঈসাকে দোষ দিতে লাগলেন। তখন হেরোদ ঈসাকে অপমান ও ঠাট্টা করলেন, আর তাঁর সৈন্যেরাও তা-ই করল। তার পরে ঈসাকে জমকালো একটা পোশাক পরিয়ে তিনি তাঁকে পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এর আগে হেরোদ ও পীলাতের মধ্যে শত্রুতা ছিল, কিন্তু সেই দিন থেকে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হল।

পীলাত তখন প্রধান ইমামদের, নেতাদের এবং সাধারণ লোকদের ডেকে একত্র করে বললেন, “আপনারা এই লোকটিকে এই দোষ দিয়ে আমার কাছে এনেছেন যে, লোকদের সে সরকারের বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে আমি আপনাদের সামনেই জেরা করেছি। আপনারা তার বিরুদ্ধে যে সব দোষ দিচ্ছেন তার একটাতেও সে দোষী বলে আমি প্রমাণ পাই নি। হেরোদও নিশ্চয় তার কোন দোষ পান নি, কারণ তিনি তাকে আমাদের কাছে ফেরৎ পাঠিয়েছেন। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, হত্যা করবার মত এমন কোন অন্যায় কাজও সে করে নি। তাই আমি তাকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব।” 

তিনি এই কথা বললেন কারণ উদ্ধার-ঈদের সময়ে প্রত্যেক বারই তাঁকে একজন কয়েদীকে ছেড়ে দিতে হত।

কিন্তু লোকেরা একসংগে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওকে দূর করুন, বারাব্বাকে আমাদের কাছে ছেড়ে দিন।” এই বারাব্বাকে শহরের মধ্যে বিদ্রোহ ও খুনাখুনির জন্য জেলে দেওয়া হয়েছিল।

পীলাত কিন্তু ঈসাকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, সেইজন্য তিনি লোকদের আবার সেই একই কথা বললেন। কিন্তু লোকেরা এই বলে চেঁচাতেই থাকল, “ওকে ক্রুশে দিন, ক্রুশে দিন।”

পীলাত তৃতীয়বার লোকদের বললেন, “কেন, এই লোকটি কি দোষ করেছে? আমি তো তার কোন দোষই দেখতে পাচ্ছি না যাতে তাকে মৃত্যুর শাস্তি দেওয়া যায়। সেইজন্য তাকে আমি অন্য শাস্তি দেবার পর ছেড়ে দেব।”

কিন্তু লোকেরা ঈসাকে ক্রুশের উপরে হত্যা করবার জন্য চিৎকার করতে থাকল এবং শেষে তারা চেঁচিয়েই জয়ী হল। পীলাত লোকদের কথা মেনে নেওয়া ঠিক করলেন। বিদ্রোহ ও খুনের জন্য যাকে জেলে দেওয়া হয়েছিল লোকেরা তাকেই চেয়েছিল; সেইজন্য পীলাত সেই লোককে ছেড়ে দিলেন এবং লোকদের ইচ্ছামত ঈসাকে হত্যা করবার জন্য তাদের হাতে দিলেন।

লূক

Posted in জীবন, বই, বিশ্বাস, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , , , , , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

বিশ্বাসঘাতকতা করেছে

ঈসা সেই জায়গা ছেড়ে নিজের নিয়ম মত জৈতুন পাহাড়ে গেলেন। তাঁর সাহাবীরা তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। ঠিক জায়গায় পৌঁছাবার পর ঈসা তাঁদের বললেন, “মুনাজাত কর যেন পরীক্ষায় না পড়।”

তারপর ঈসা সাহাবীদের কাছ থেকে কিছু দূরে গিয়ে হাঁটু পেতে মুনাজাত করতে লাগলেন, “পিতা, যদি তুমি চাও তবে এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও। তবুও আমার ইচ্ছামত নয়, তোমার ইচ্ছামতই হোক।”

তখন বেহেশত থেকে একজন ফেরেশতা এসে ঈসাকে শক্তি দান করলেন। মনের কষ্টে ঈসা আরও আকুলভাবে মুনাজাত করলেন। তাঁর গায়ের ঘাম রক্তের ফোঁটার মত হয়ে মাটিতে পড়তে লাগল।

মুনাজাতের পরে তিনি উঠে তাঁর সাহাবীদের কাছে আসলেন। মনের দুঃখে ক্লান্ত হয়ে সাহাবীরা ঘুমিয়ে পড়েছেন দেখে ঈসা তাঁদের বললেন, “কেন ঘুমা”ছ? উঠে মুনাজাত কর যেন পরীক্ষায় না পড়।”

ঈসা তখনও কথা বলছেন এমন সময় অনেক লোক সেখানে আসল। এহুদা নামে তাঁর বারোজন সাহাবীদের মধ্যে একজন সেই লোকদের আগে আগে আসছিল। এহুদা ঈসাকে চুমু দেবার জন্য তাঁর কাছে আসল। তখন ঈসা তাকে বললেন, “এহুদা, চুমু দিয়ে কি ইব্‌ন্তেআদমকে ধরিয়ে দিচ্ছ?”

যাঁরা ঈসার চারপাশে ছিলেন তাঁরা বুঝলেন কি হতে যাচ্ছে। এইজন্য তাঁরা ঈসাকে বললেন, “হুজুর, আমরা কি ছোরা দিয়ে আঘাত করব?”

সাহাবীদের মধ্যে একজন ছোরার আঘাতে মহা-ইমামের গোলামের ডান কানটা কেটে ফেললেন। ঈসা বললেন, “থাক্‌, আর নয়।” এই বলে তিনি লোকটির কান ছুঁয়ে তাকে ভাল করলেন।

যে সব প্রধান ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের কর্মচারীরা এবং বৃদ্ধ নেতারা ঈসাকে ধরতে এসেছিলেন ঈসা তাঁদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে এসেছেন? বায়তুল-মোকাদ্দসে দিনের পর দিন আমি আপনাদের সামনে ছিলাম, কিন্তু তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। তবে এখন অবশ্য আপনাদেরই সময়; অন্ধকারের ক্ষমতা এখন দেখা যাচ্ছে।”

তখন তাঁরা ঈসাকে ধরে মহা-ইমামের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। পিতর দূরে থেকে পিছনে পিছনে যাচ্ছিলেন। উঠানের মাঝখানে যারা আগুন জ্বেলে বসে ছিল পিতর এসে তাদের মধ্যে বসলেন। একজন চাকরাণী সেই আগুনের আলোতে পিতরকে দেখতে পেল এবং ভাল করে তাকিয়ে দেখে বলল, “এই লোকটাও ওর সংগে ছিল।”

পিতর অস্বীকার করে বললেন, “আমি ওকে চিনি না।”

কিছুক্ষণ পরে আর একজন লোক তাঁকে দেখে বলল, “তুমিও তো ওদের একজন।”

পিতর বললেন, “না, আমি নই।”

এক ঘণ্টা পরে আর একজন জোর দিয়ে বলল, “এই লোকটি নিশ্চয়ই ওর সংগে ছিল, কারণ এ তো গালীল প্রদেশের লোক।”

পিতর বললেন, “দেখ, তুমি কি বলছ আমি বুঝতে পারছি না।”

পিতরের কথা শেষ হতে না হতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল। তখন ঈসা মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে দেখলেন। এতে যে কথা ঈসা তাঁকে বলেছিলেন সেই কথা পিতরের মনে পড়ল, “আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেন না।” তখন পিতর বাইরে গিয়ে খুব কাঁদতে লাগলেন।

লূক

Posted in জীবন, বই, বিশ্বাস, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

একটি নতুন প্রতিশ্রুতি

সেই সময় ইহুদীদের খামিহীন রুটির ঈদ কাছে এসে গিয়েছিল। এটাকে উদ্ধার-ঈদও বলা হয়। প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা ঈসাকে গোপনে হত্যা করবার উপায় খুঁজছিলেন, কারণ তাঁরা লোকদের ভয় করতেন।

এই সময় এহুদা, যাকে ইষ্কারিয়োৎ বলা হত, তার ভিতরে শয়তান ঢুকল। এই এহুদা ছিল ঈসার বারোজন সাহাবীদের মধ্যে একজন। কেমন করে ঈসাকে প্রধান ইমামদের ও বায়তুল-মোকাদ্দসের কর্মচারীদের হাতে ধরিয়ে দেবে এই বিষয়ে সে গিয়ে তাঁদের সংগে পরামর্শ করল। এতে তাঁরা খুব খুশী হয়ে এহুদাকে টাকা দিতে স্বীকার করলেন। তখন এহুদা রাজী হয়ে উপযুক্ত সুযোগ খুঁজতে লাগল যাতে লোকদের অনুপস্থিতিতে ঈসাকে ধরিয়ে দিতে পারে।

খামিহীন রুটির ঈদের দিনে উদ্ধার-ঈদের মেজবানীর জন্য ভেড়ার বাচ্চা জবাই করা হত। সেই দিনটা উপস্থিত হলে পর ঈসা পিতর ও ইউহোন্নাকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা গিয়ে আমাদের জন্য উদ্ধার-ঈদের মেজবানী প্রস্তুত কর যেন আমরা তা খেতে পারি।”

তাঁরা ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কোথায় এই মেজবানী আমাদের প্রস্তুত করতে বলেন?”

ঈসা বললেন, “দেখ, তোমরা যখন শহরে ঢুকবে তখন একজন পুরুষ লোককে এক কলসী পানি নিয়ে যেতে দেখবে। তার পিছন পিছন গিয়ে সে যে ঘরে ঢুকবে সেই ঘরের মালিককে বলবে, ‘হুজুর জানতে চাইছেন, তিনি সাহাবীদের সংগে যেখানে উদ্ধার-ঈদের মেজবানী খেতে পারেন সেই মেহমান্তঘরটা কোথায়?” তখন সে তোমাদের উপরতলার একটা সাজানো বড় ঘর দেখিয়ে দেবে; সেখানেই সব কিছু প্রস্তুত কোরো।”

ঈসা তাঁদের যেমন বলেছিলেন, তাঁরা গিয়ে সব কিছু সেই রকমই দেখতে পেলেন এবং উদ্ধার-ঈদের মেজবানী প্রস্তুত করলেন। 

তারপর সময় মত ঈসা সাহাবীদের সংগে খেতে বসলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “আমি কষ্টভোগ করবার আগে তোমাদের সংগে উদ্ধার-ঈদের এই মেজবানী খাবার আমার খুবই ইচ্ছা ছিল। আমি তোমাদের বলছি, আল্লাহ্‌র রাজ্যে এর উদ্দেশ্য পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমি আর কখনও এই মেজবানী খাব না।”

এর পর ঈসা পেয়ালা নিলেন এবং আল্লাহ্‌কে শুকরিয়া জানিয়ে বললেন, “তোমাদের মধ্যে এটা ভাগ করে নাও, কারণ আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে আল্লাহ্‌র রাজ্য না আসা পর্যন্ত আমি আর কখনও আংগুর ফলের রস খাব না।”

তারপর তিনি রুটি নিয়ে আল্লাহ্‌কে শুকরিয়া জানালেন। পরে সেই রুটি টুকরা টুকরা করে সাহাবীদের দিয়ে বললেন, “এটা আমার শরীর যা তোমাদের জন্য দেওয়া হবে। আমাকে মনে করবার জন্য এই রকম কোরো।”

খাওয়ার পরে সেইভাবে তিনি পেয়ালাটা তাঁদের দিয়ে বললেন, “আমার রক্তের দ্বারা আল্লাহ্‌র যে নতুন ব্যবস্থা বহাল করা হবে সেই ব্যবস্থার চিহ্ন হল এই পেয়ালা। আমার এই রক্ত তোমাদের জন্য দেওয়া হবে। দেখ, যে আমাকে ধরিয়ে দেবে তার হাত আমার হাতের সংগে এই টেবিলের উপরেই আছে। আল্লাহ্‌ যা ঠিক করে রেখেছেন সেই ভাবেই ইব্‌ন্তেআদম মারা যাবেন বটে; কিন্তু হায় সেই লোক, যে তাঁকে ধরিয়ে দেয়!”

সাহাবীরা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন যে, তাঁদের মধ্যে কে এমন কাজ করবেন।

কাকে সবচেয়ে বড় বলা হবে এ নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হল। ঈসা তাঁদের বললেন, “অ-ইহুদীদের মধ্যেই বাদশাহ্‌রা প্রভুত্ব করেন আর তাদের শাসনকর্তাদের উপকারী নেতা বলা হয়, কিন্তু তোমাদের মধ্যে এই রকম হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড়, সে বরং সবচেয়ে যে ছোট তারই মত হোক, আর যে নেতা, সে সেবাকারীর মত হোক। কে বড়, যে খেতে বসে, না যে চাকর পরিবেশন করে? যে খেতে বসে, সে নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সেবাকারীর মত হয়েছি।

“আমার সব দুঃখ-কষ্টের সময়ে তোমরা আমাকে ছেড়ে যাও নি। আমার পিতা যেমন আমাকে শাসন্তক্ষমতা দান করেছেন তেমনি আমিও তোমাদের ক্ষমতা দান করছি। এতে আমার রাজ্যে তোমরা আমার সংগে খাওয়া-দাওয়া করবে এবং সিংহাসনে বসে ইসরাইলের বারোটি গোষ্ঠীর বিচার করবে।

“শিমোন, শিমোন, দেখ, শয়তান তোমাদের গমের মত করে চালুনি দিয়ে চেলে দেখবার অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু আমি তোমার জন্য মুনাজাত করেছি যেন তোমার ঈমানে ভাংগন না ধরে। তুমি যখন আমার কাছে ফিরে আসবে তখন তোমার এই ভাইদের শক্তিশালী করে তুলো।”

পিতর ঈসাকে বললেন, “হুজুর, আপনার সংগে আমি জেলে যেতে এবং মরতেও প্রস্তুত আছি।”

জবাবে ঈসা বললেন, “পিতর, আমি তোমাকে বলছি, আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করে বলবে যে, তুমি আমাকে চেন না।”

তারপর ঈসা তাঁর সাহাবীদের বললেন, “আমি যখন তোমাদের টাকার থলি, ঝুলি ও জুতা ছাড়া পাঠিয়েছিলাম তখন কি তোমাদের কোন অভাব হয়েছিল?”

সাহাবীরা বললেন, “জ্বী না, হয় নি।”

ঈসা বললেন, “কিন্তু এখন আমি বলছি, যার টাকার থলি বা ঝুলি আছে সে তা নিয়ে যাক। যার ছোরা নেই সে তার চাদর বিক্রি করে একটা ছোরা কিনুক। পাক-কিতাবে লেখা আছে, ‘তাঁকে গুনাহ্‌গারদের সংগে গোণা হল’। আমি তোমাদের বলছি, এই কথা আমার মধ্যেই পূর্ণ হতে হবে, কারণ আমার বিষয়ে যা লেখা আছে তা পূর্ণ হতে যাচ্ছে।”

তখন সাহাবীরা বললেন, “হুজুর, দেখুন, এখানে দু’টা ছোরা আছে।”

ঈসা জবাব দিলেন, “থাক্‌, আর নয়।”

লূক

Posted in জীবন, বই, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

প্রচন্ড সমস্যা

তারপর ঈসা ও তাঁর সাহাবীরা গালীল সাগর পার হয়ে গেরাসেনীদের এলাকায় গেলেন। 

ঈসা নৌকা থেকে নামতেই ভূতে পাওয়া একজন লোক কবরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর সামনে আসল। লোকটা কবরস্থানেই থাকত এবং শিকল দিয়েও কেউ আর তাকে বেঁধে রাখতে পারত না। তার হাত-পা প্রায়ই শিকল দিয়ে বাঁধা হত, কিন্তু সে শিকল ছিঁড়ে ফেলত এবং পায়ের বেড়ী ভেংগে ফেলত। কেউই তাকে সামলাতে পারত না। সে দিনরাত কবরে কবরে ও পাহাড়ে পাহাড়ে চিৎকার করে বেড়াত এবং পাথর দিয়ে নিজেই নিজের শরীর কাটত।

ঈসাকে দূর থেকে দেখে সে দৌড়ে এসে তাঁর পায়ের উপর উবুড় হয়ে পড়ল, আর সে চিৎকার করে বলল, “আল্লাহ্‌তা’লার পুত্র ঈসা, আমার সংগে আপনার কি দরকার? আমি আপনাকে আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে বলছি, আপনি আমাকে যন্ত্রণা দেবেন না।” সে এই কথা বলল কারণ ঈসা তাকে বলেছিলেন, “ভূত, এই লোকটির মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।”

ঈসা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি?”

সে বলল, “আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকে আছি।” সে ঈসাকে বারবার কাকুতি-মিনতি করে বলল যেন তিনি সেই এলাকা থেকে তাদের বের করে না দেন।

সেই সময় সেই জায়গার কাছে পাহাড়ের গায়ে খুব বড় এক পাল শূকর চরছিল। ভূতেরা ঈসাকে মিনতি করে বলল, “ঐ শূকরের পালের মধ্যে আমাদের পাঠিয়ে দিন; ওদের মধ্যে আমাদের ঢুকতে দিন।”

ঈসা অনুমতি দিলে পর সেই ভূতেরা বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে গেল। তাতে সমস্ত শূকর ঢালু পার দিয়ে জোরে দৌড়ে গেল এবং সাগরের মধ্যে পড়ে ডুবে মরল। সেই পালের মধ্যে প্রায় দু’হাজার শূকর ছিল।

যারা শূকর চরাচ্ছিল তারা তখন পালিয়ে গিয়ে গ্রামে এবং তার আশেপাশের সব জায়গায় এই খবর দিল। তখন লোকেরা দেখতে আসল কি হয়েছে। তারা ঈসার কাছে এসে দেখল, যাকে অনেকগুলো ভূতে পেয়েছিল সেই লোকটা কাপড়-চোপড় পরে সুস্থ মনে বসে আছে। এ দেখে লোকেরা ভয় পেল। এই ঘটনা যারা দেখেছিল তারা সেই ভূতে পাওয়া লোকটার বিষয় ও সেই শূকরগুলোর বিষয় লোকদের জানাল। এতে লোকেরা ঈসাকে অনুরোধ করতে লাগল যেন তিনি তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যান।

ঈসা যখন নৌকায় উঠছিলেন তখন যাকে ভূতে পেয়েছিল সেই লোকটি তাঁর সংগে যাবার জন্য মিনতি করতে লাগল। কিন্তু ঈসা তাঁকে এই বলে বিদায় করলেন, “তুমি তোমার বাড়ীতে ফিরে যাও এবং মাবুদ তোমার জন্য কত বড় কাজ করেছেন ও তোমার উপর কত দয়া দেখিয়েছেন তা গিয়ে তোমার বাড়ীর লোকদের বল।”

লোকটি তখন চলে গেল এবং ঈসা তার জন্য কত বড় কাজ করেছেন তা দেকাপলি এলাকায় বলে বেড়াতে লাগল। তাতে সবাই আশ্চর্য হল।

মার্ক

Posted in জীবন, বই, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

সব বুঝিয়ে দিলেন

ঈসা আরও বললেন, “কেউ কি বাতি নিয়ে ঝুড়ি বা খাটের নীচে রাখে? সে কি তা বাতিদানের উপর রাখে না? কোন জিনিস যদি লুকানো থাকে তবে তা প্রকাশিত হবার জন্যই লুকানো থাকে; আবার কোন জিনিস যদি ঢাকা থাকে তবে তা খুলবার জন্যই ঢাকা থাকে। যদি কারও শুনবার কান থাকে সে শুনুক।”

এর পরে ঈসা বললেন, “তোমরা যা শুনছ সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও। তোমরা যেভাবে মেপে দাও তোমাদের জন্য সেইভাবে মাপা হবে; এমন কি, বেশী করেই মাপা হবে। যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।”

ঈসা আরও বললেন, “আল্লাহ্‌র রাজ্য এই রকম: একজন লোক জমিতে বীজ ছড়াল। পরে সে রাতে ঘুমিয়ে ও দিনে জেগে থেকে সময় কাটাল। এর মধ্যে সেই বীজ থেকে চারা গজিয়ে বড় হল, কিন্তু কিভাবে হল তা সে জানল না। জমি নিজে নিজেই ফল জন্মাল- প্রথমে চারা, পরে শীষ এবং শীষের মাথায় পরিপূর্ণ শস্যের দানা। দানা পাকলে পর সে কাসে- লাগাল, কারণ ফসল কাটবার সময় হয়েছে।”

তারপর ঈসা বললেন, “কিসের সংগে আমরা আল্লাহ্‌র রাজ্যের তুলনা করব? কোন্‌ দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে তা বুঝাব? সেই রাজ্য একটা সরিষা দানার মত। জমিতে বুনবার সময় দেখা যায় যে, ওটা সব বীজের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। কিন্তু লাগাবার পর যখন গাছ বেড়ে ওঠে তখন সমস্ত শাক-সব্‌জির মধ্যে ওটা সবচেয়ে বড় হয়, আর এমন বড় বড় ডাল বের হয় যে, পাখীরাও তার আড়ালে বাসা বাঁধে।”

এই রকম আরও অনেক গল্পের মধ্য দিয়ে ঈসা আল্লাহ্‌র কালাম লোকদের কাছে বলতেন। তারা যতটুকু বুঝতে পারত ততটুকুই তিনি তাদের কাছে বলতেন। গল্প ছাড়া তিনি তাদের শিক্ষা দিতেন না, কিন্তু সাহাবীরা যখন তাঁর সংগে একা থাকতেন তখন তিনি সব কিছু তাঁদের বুঝিয়ে দিতেন।

সেই দিন সন্ধ্যাবেলা ঈসা তাঁর সাহাবীদের বললেন, “চল, আমরা সাগরের ওপারে যাই।”

তখন সাহাবীরা লোকদের ছেড়ে ঈসা যে নৌকায় ছিলেন সেই নৌকাতে করে তাঁকে নিয়ে চললেন। অবশ্য সেখানে আরও অন্য নৌকাও ছিল। নৌকা যখন চলছিল তখন একটা ভীষণ ঝড় উঠল এবং ঢেউগুলো নৌকার উপর এমনভাবে আছড়ে পড়ল যে, নৌকা পানিতে ভরে উঠতে লাগল। ঈসা কিন্তু নৌকার পিছন দিকে একটা বালিশের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। সাহাবীরা তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “হুজুর, আমরা যে মারা পড়ছি সেদিকে কি আপনার খেয়াল নেই?”

ঈসা উঠে বাতাসকে ধমক দিলেন এবং সাগরকে বললেন, “থাম, শান্ত হও।” তাতে বাতাস থেমে গেল ও সব কিছু খুব শান্ত হয়ে গেল।

তিনি সাহাবীদের বললেন, “তোমরা ভয় পাও কেন? এখনও কি তোমাদের বিশ্বাস হয় নি?”

এতে সাহাবীরা ভীষণ ভয় পেলেন এবং নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি কে যে, বাতাস এবং সাগরও তাঁর কথা শোনে?”

মার্ক

Posted in জীবন, বই, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

অবাক হবেন না

সেইজন্য মসীহ্‌ শরীরে কষ্ট সহ্য করেছিলেন বলে তোমরাও নিজেদের দিলে সেই একই মনোভাব গড়ে তোল, কারণ শরীরে যে কষ্ট ভোগ করেছে সে গুনাহের অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে। তার ফলে এই দুনিয়ার বাকী জীবনটা সে আর দুনিয়ার কামনা-বাসনা তৃপ্ত করে কাটায় না, বরং আল্লাহ্‌র ইচ্ছা পালন করেই কাটায়। যারা আল্লাহ্‌কে জানে না তাদের মত তোমরাও আগে লমপটতা করে, খারাপ কামনা-বাসনার মধ্যে থেকে, মাতলামি করে, হৈ-হল্লা করে মদ খেয়ে ও খাওয়া-দাওয়া করে এবং জঘন্য প্রতিমাপূজা করে অনেক সময় কাটাতে। 

কিন্তু এখন সেই লোকেরাই দেখে আশ্চর্য হয় যে, তোমরা তাদের সেই ভীষণ উ”ছৃঙ্খলতায় আর যোগ দিচ্ছ না, আর সেইজন্য তারা তোমাদের বিরুদ্ধে নিন্দার কথা বলে। কিন্তু যিনি জীবিত ও মৃত সকলের বিচার করবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন তাঁর কাছে তাদের হিসাব দিতে হবে। মৃতদের কাছেও তো সেইজন্য মসীহের বিষয়ে সুসংবাদ তবলিগ করা হয়েছিল, যেন শরীরের দিক থেকে মানুষের মতই তাদের বিচার হলেও রূহে তারা আল্লাহ্‌র মত জীবিত থাকতে পারে।

এখন সব কিছুর শেষ সময় কাছে এসে গেছে। সেইজন্য তোমাদের মন স্থির কর এবং নিজেদের দমনে রাখ যেন মুনাজাত করতে পার। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, তোমরা একে অন্যকে গভীর ভাবে মহব্বত কোরো, কারণ মহব্বত অনেক গুনাহ্‌কে ঢেকে রাখে। কোন রকম বিরক্তি প্রকাশ না করে তোমরা একে অন্যকে মেহমান হিসাবে গ্রহণ কর। বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত আল্লাহ্‌র রহমত পেয়ে যে লোক বিশ্বস্ত ভাবে তা কাজে লাগিয়েছে, সেই রকম লোক হিসাবে তোমরা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে যে যেরকম দান পেয়েছ তা একে অন্যের সেবা করবার জন্য ব্যবহার কর। যদি কেউ প্রচার করে তবে সে এইভাবে প্রচার করুক যেন সে আল্লাহ্‌র নিজের মুখের কথা বলছে। যদি কেউ সেবা করে তবে আল্লাহ্‌র দেওয়া শক্তিতে সে সেবা করুক, যেন ঈসা মসীহের মধ্য দিয়ে সব কিছুতে আল্লাহ্‌ প্রশংসা পান। প্রশংসা ও শক্তি চিরকাল তাঁরই। আমিন।

প্রিয় বন্ধুরা, তোমাদের যে এখন অগ্নি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাতে আশ্চর্য হয়ে মনে কোরো না যে, তোমাদের উপর অদ্ভুত কিছু একটা হচ্ছে। তার চেয়ে বরং তোমরা যে মসীহের দুঃখভোগের ভাগ নি”ছ তাতে আনন্দিত হও, যেন তাঁর মহিমা যখন প্রকাশিত হবে তখন তোমরা আনন্দে পূর্ণ হও। মসীহের জন্য যদি তোমরা অপমানিত হও তবে ধন্য তোমরা, কারণ আল্লাহ্‌র মহিমাপূর্ণ রূহ্‌ তোমাদের উপর আছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ খুনী, চোর, অন্যায়কারী হয়ে বা অন্যায়ভাবে অন্যের ব্যাপারে হাত দিয়ে কষ্ট ভোগ না করুক। কিন্তু ঈসায়ী হিসাবে যদি কেউ কষ্ট ভোগ করে তবে সে লজ্জা না পাক, বরং তার সেই নাম আছে বলে সে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করুক। 

বিচার শুরু হবার সময় হয়েছে এবং তা আল্লাহ্‌র পরিবারের লোকদের থেকেই শুর করা হবে। আর যদি সেই বিচার আমাদের থেকেই শুরু করা হয় তবে যারা আল্লাহ্‌র দেওয়া সুসংবাদ মেনে নেয় নি তাদের অবস্থা কি হবে? কিতাবে আছে, আল্লাহ্‌ভক্ত লোকের নাজাত পাওয়া যদি এত শক্ত হয়, তবে যারা গুনাহ্‌গার আর আল্লাহ্‌র প্রতি ভয়হীন, তাদের অবস্থা কি হবে?

তাহলে আল্লাহ্‌র ইচ্ছাতে যারা কষ্টভোগ করছে, তারা তাদের বিশ্বস্ত সৃষ্টিকর্তার হাতে নিজেদের তুলে দিক এবং ভাল কাজ করতে থাকুক।

পিতর

Posted in জীবন, বই, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

একে অন্যকে ভালবাসো

শেষে বলি, তোমাদের সকলের মন যেন একই রকম হয়। তোমরা একে অন্যের দুঃখে দুঃখ বোধ কর, ভাইয়ের মত ভালবাসার ভাব রাখ এবং দয়ালু ও নম্র হও। অন্যায়ের বদলে কারও উপর অন্যায় কোরো না বা কেউ গালাগালি দিলে তাকে ফিরে গালাগালি দিয়ো না, বরং তাদের জন্য দোয়া চেয়ো; কারণ দোয়া পাবার জন্যই আল্লাহ্‌ তোমাদের ডেকেছেন। পাক-কিতাবে লেখা আছে, যে সুখী জীবন কাটাতে চায় আর সুদিন দেখবার আশা করে, খারাপ কথা থেকে তার জিভ্‌কে, ছলনার কথা থেকে তাঁর ঠোঁটকে সে সামলাক। খারাপ কাজ থেকে সে দূরে থাকুক, আর ভাল কাজ করুক; শান্তির জন্য আগ্রহী হয়ে সে তার পিছু না ছাড়ুক। যারা ন্যায়ের পথে চলে তাদের উপর মাবুদের চোখ আছে, তাদের মুনাজাত শুনবার জন্য তাঁর কান খোলাই রয়েছে; কিন্তু যারা খারাপ কাজ করে, মাবুদ তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান।

ভাল কাজ করতে যদি তোমাদের আগ্রহ থাকে তবে কে তোমাদের ক্ষতি করবে? আল্লাহ্‌র ইচ্ছামত চলতে গিয়ে যদি তোমাদের কষ্টভোগও করতে হয়, তবে ধন্য তোমরা। যারা তোমাদের দুঃখ-কষ্ট দেয় তাদের তোমরা ভয় কোরো না বা দুঃখ-কষ্টের সময়ে অস্থির হয়ো না, বরং মসীহ্‌কে তোমাদের দিলে প্রভু হিসাবে স্থান দাও। তোমাদের আশা-ভরসা সম্বন্ধে যদি কেউ প্রশ্ন করে তবে তাকে উত্তর দেবার জন্য সব সময় প্রস্তুত থেকো, কিন্তু এই উত্তর নম্রতা ও ভয়ের সংগে দিয়ো। তোমাদের বিবেক পরিষ্কার রেখো, যেন মসীহের লোক হিসাবে তোমাদের ভাল চালচলনের যারা নিন্দা করে তারা তোমাদের নিন্দা করেছে বলে লজ্জা পায়। খারাপ কাজ করে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বরং আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় ভাল কাজ করে কষ্ট পাওয়া অনেক ভাল। 

মসীহ্‌ও গুনাহের জন্য একবারই মরেছিলেন। আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের নিয়ে যাবার জন্য সেই নির্দোষ লোকটি গুনাহ্‌গারদের জন্য, অর্থাৎ আমাদের জন্য মরেছিলেন। শরীরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু রূহে তাঁকে জীবিত করা হয়েছিল এবং তিনি বন্দী রূহ্‌দের কাছে গিয়ে প্রচার করেছিলেন। অনেক দিন আগে নবী নূহের সেই জাহাজ তৈরীর সময়ে আল্লাহ্‌ যখন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন তখন যারা অবাধ্য হয়েছিল এই রূহ্‌গুলো তাদেরই। সেই জাহাজে উঠে মাত্র অল্প কয়েকজন, অর্থাৎ মাত্র আটজন সেই পানির মধ্য থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এটা হল তরিকাবন্দীর একটা ছবি যা এখন তোমাদের নাজাত দেয়। তরিকাবন্দী যে তোমাদের শরীর থেকে ময়লা দূর করে তা নয়; আল্লাহ্‌র কাছে এটা একটা পরিষ্কার বিবেকের সাড়া। ঈসা মসীহের মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার মধ্য দিয়ে তোমাদের নাজাত দেওয়া হয়। মসীহ্‌ বেহেশতে গেছেন এবং এখন আল্লাহ্‌র ডান দিকে আছেন, আর আসমানের ফেরেশতারা, ক্ষমতার অধিকারীরা ও শাসনকর্তারা তাঁর অধীনে আছেন।

পিতর

Posted in জীবন, বই, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

কারাগারে মৃত্যু

শিক্ষা দেবার জন্য এই সব গল্প বলা শেষ করে ঈসা সেখান থেকে চলে গেলেন। তারপর নিজের গ্রামে গিয়ে তিনি মজলিস-খানায় লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর কথা শুনে লোকে আশ্চর্য হয়ে বলল, “এই জ্ঞান ও এই সব অলৌকিক চিহ্ন-কাজ করবার ক্ষমতা এ কোথা থেকে পেল? কি সেই ছুতার মিস্ত্রীর ছেলে নয়? তার মায়ের নাম কি মরিয়ম নয়? আর তার ভাইয়েরা কি ইয়াকুব, ইউসুফ, শিমোন ও এহুদা নয়? তার সব বোনেরা কি আমাদের মধ্যে নেই? তাহলে কোথা থেকে সে এই সব পেল?” এইভাবে ঈসাকে নিয়ে লোকদের মনে বাধা আসতে লাগল।

তখন ঈসা তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম ও নিজের বাড়ী ছাড়া আর সব জায়গাতেই নবীরা সম্মান পান।”

লোকদের অবিশ্বাসের জন্য তিনি সেখানে বেশী অলৌকিক চিহ্ন-কাজ করলেন না।

সেই সময়ে ঈসার বিষয় শুনে গালীল প্রদেশের শাসনকর্তা হেরোদ তাঁর কর্মচারীদের বললেন, “ইনি তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া; মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন। সেইজন্যই উনি এই সব অলৌকিক চিহ্ন-কাজ করছেন।”

হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার দরুন ইয়াহিয়াকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে জেলখানায় রেখেছিলেন, কারণ ইয়াহিয়া তাঁকে বলতেন, “হেরোদিয়াকে স্ত্রী হিসাবে রাখা আপনার উচিত নয়।” হেরোদ ইয়াহিয়াকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি লোকদের ভয় করতেন কারণ লোকে ইয়াহিয়াকে নবী বলে মানত।

হেরোদের জন্মদিনের উৎসবে হেরোদিয়ার মেয়ে উপস্থিত লোকদের সামনে নেচে হেরোদকে সন্তুষ্ট করল। সেইজন্য হেরোদ কসম খেয়ে বললেন সে যা চাইবে তা-ই তিনি তাকে দেবেন। মেয়েটি তার মায়ের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে বলল, “থালায় করে তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়ার মাথাটা এখানে আমার কাছে এনে দিন।”

এতে বাদশাহ্‌ হেরোদ দুঃখিত হলেন, কিন্তু যাঁরা তাঁর সংগে খেতে বসেছিলেন তাঁদের সামনে কসম খেয়েছিলেন বলে তিনি তা দিতে হুকুম করলেন। তিনি লোক পাঠিয়ে জেলখানার মধ্যেই ইয়াহিয়ার মাথা কাটালেন। পরে মাথাটি থালায় করে এনে মেয়েটিকে দেওয়া হলে পর সে তার মায়ের কাছে তা নিয়ে গেল। 

এর পর ইয়াহিয়ার সাহাবীরা এসে তাঁর লাশটা নিয়ে গিয়ে দাফন করলেন এবং সেই খবর ঈসাকে গিয়ে দিলেন।

মথি

Posted in জীবন, বই, ভালবাসা, সাহিত্য | Tagged , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান