সেই দিনই ঈসা ঘর থেকে বের হয়ে সাগরের ধারে গিয়ে বসলেন। তাঁর কাছে এত লোক এসে জমায়েত হল যে, তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন, আর সমস্ত লোক সাগরের ধারে দাঁড়িয়ে রইল। তখন তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক বিষয় তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।
তিনি বললেন, “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। বুনবার সময় কতগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল আর পাখীরা এসে তা খেয়ে ফেলল। কতগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল। সেখানে বেশী মাটি ছিল না। মাটি গভীর ছিল না বলে তাড়াতাড়ি চারা গজিয়ে উঠল, কিন্তু সূর্য উঠলে পর তা পুড়ে গেল এবং শিকড় ভাল করে বসে নি বলে শুকিয়ে গেল। আবার কতগুলো বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল। তাতে কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলো চেপে রাখল। আর কতগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ে কোনটাতে একশো গুণ, কোনটাতে ষাট গুণ আর কোনটাতে ত্রিশ গুণ ফসল জন্মাল।”
গল্পের শেষে ঈসা বললেন, “যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।”
পরে সাহাবীরা ঈসার কাছে এসে তাঁকে বললেন, “আপনি গল্পের মধ্য দিয়ে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছেন কেন?”
জবাবে তিনি সাহাবীদের বললেন, “বেহেশতী রাজ্যের গোপন সত্যগুলো তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে কিন্তু ওদের জানতে দেওয়া হয় নি, কারণ যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, আর তাতে তার অনেক হবে। কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছে থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। সেইজন্য আমি গল্পের মধ্য দিয়ে ওদের শিক্ষা দিই, কারণ ওরা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না এবং বোঝে না। এদের মধ্য দিয়ে ইশাইয়া নবীর এই কথা পূর্ণ হচ্ছে: তোমরা শুনতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই বুঝবে না; দেখতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই জানবে না। এই সব লোকদের দিল অসাড় এবং কান বন্ধ হয়ে গেছে, আর তারা তাদের চোখও বন্ধ করে রেখেছে, যেন তারা চোখ দিয়ে না দেখে, কান দিয়ে না শোনে এবং দিল নিয়ে না বোঝে, আর ভাল হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না আসে।
“কিন্তু ধন্য তোমরা, কারণ তোমাদের চোখ দেখতে পায় এবং তোমাদের কান শুনতে পায়। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা যা দেখছ তা অনেক নবী ও আল্লাহ্ভক্ত লোকেরা দেখতে চেয়েও দেখতে পান নি, আর তোমরা যা যা শুনছ তা তাঁরা শুনতে চেয়েও শুনতে পান নি।
“এখন তোমরা চাষীর গল্পের অর্থ শোন। যখন কেউ বেহেশতী রাজ্যের কথা শুনেও বোঝে না তখন শয়তান এসে তার দিলে যে কথা বোনা হয়েছিল তা কেড়ে নেয়। সেই পথের পাশে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে এই রকম লোকদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে। আর পাথুরে জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা বেহেশতী রাজ্যের কথা শুনে তখনই আনন্দের সংগে তা গ্রহণ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে শিকড় ভাল করে বসে না বলে তারা অল্প সময়ের জন্য স্থির থাকে। যখন সেই কথার জন্য কষ্ট এবং জুলুম আসে তখনই তারা পিছিয়ে যায়। কাঁটার মধ্যে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কথা শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা-ভাবনা এবং ধন-সম্পত্তির মায়া সেই কথাকে চেপে রাখে। সেইজন্য তাতে কোন ফল হয় না। ভাল জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কথা শুনে বোঝে এবং ফল দেয়। কেউ দেয় একশো গুণ, কেউ দেয় ষাট গুণ আর কেউ দেয় ত্রিশ গুণ।”
মথি